বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় বরাদ্দ কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, কোন খাতে কত

আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকারের বরাদ্দ ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমছে। প্রায় সব খাতেই বাজেট কাটছাঁট করা হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতও অন্তর্ভুক্ত। আশা করা হয়েছিল যে এবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং বরাদ্দ বাড়ানো হবে, কিন্তু তা হচ্ছে না।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নেওয়া হয়। ৬ মে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি অনুমোদন পাবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
উন্নয়ন বাজেটে অগ্রাধিকার: পরিবহন ও বিদ্যুৎ শীর্ষে
নতুন এডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে (৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা)। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত (৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা)। শিক্ষা খাত তৃতীয় স্থানে (২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা), গৃহায়ণ চতুর্থ (২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা) এবং স্বাস্থ্য পঞ্চম স্থানে (১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা)।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমছে
চলতি বছরের তুলনায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমেছে ২,৯৭১ কোটি টাকা (৯.৫%) এবং স্বাস্থ্য খাতে কমেছে ২,৫৩৪ কোটি টাকা (১২.২৫%)। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক খাতগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত ছিল।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “দুর্নীতি রোধ এবং প্রকল্পের বাস্তবায়নযোগ্যতা নিশ্চিত করতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে নতুন অবকাঠামো প্রকল্প কমিয়ে গুণগত উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।”
এডিপির আকার ও বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ
নতুন এডিপির প্রস্তাবিত আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। গত কয়েক বছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার কমেছে—২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটি ছিল মাত্র ৮১%।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “বাস্তবায়ন বাড়াতে ব্যয় কমানো জরুরি, কিন্তু সব খাত সমানভাবে কাটছাঁট করা উচিত নয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো হতো।”
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বাংলাদেশের অবস্থান
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষা খাতে জিডিপির মাত্র ২% ব্যয় করে বাংলাদেশ, যা বৈশ্বিক প্রস্তাবিত ৬% এর চেয়ে অনেক কম। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বার্ষিক ব্যয় মাত্র ৫৮ ডলার, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৮৮ ডলার প্রয়োজন।
অর্থনীতিবিদদের মত
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সংস্কারের বড় সুযোগ ছিল। কিন্তু বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হতাশাজনক।”
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ যেসব খাতে
- পরিবহন ও যোগাযোগ: ৫৮,৯৭৩ কোটি টাকা
- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: ৩২,৩৯২ কোটি টাকা
- শিক্ষা: ২৮,৫৫৭ কোটি টাকা
- গৃহায়ণ: ২২,৭৭৬ কোটি টাকা
- স্বাস্থ্য: ১৮,১৪৮ কোটি টাকা
উপসংহার
উন্নয়ন বাজেটে অগ্রাধিকার আগের মতোই রয়ে গেছে—পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শীর্ষে, অথচ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক খাতগুলো পিছিয়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাস্তবায়ন বাড়ানোর পাশাপাশি এই খাতগুলোর বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি ছিল।