দাওয়াতের সময় নবীজি (সা.)-এর আমল ও দোয়া

দাওয়াত কেবল খাবারের আমন্ত্রণ নয়—এটি হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ার এক অনন্য সুযোগ। একই টেবিলে বসে আন্তরিকতা, স্নেহ ও ভালোবাসা বিনিময়ের মাধ্যমে এই সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে টিকে আছে। অতিথি আপ্যায়ন নবী-রাসুলদের জীবনচরিত থেকে পাওয়া এক মহৎ শিক্ষা। তাই দাওয়াত সামাজিক প্রথার চেয়েও বেশি—এটি মানবিক বন্ধন তৈরির এক চিরন্তন রীতি।
দাওয়াতদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও দোয়া
কারো দাওয়াত গ্রহণ করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া এবং তার মঙ্গলের জন্য দোয়া করা মহানবী (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তিনি কখনো কোনো আয়োজকের বাড়ি থেকে তাদের জন্য দোয়া না করে ফিরতেন না।
একবার আবুল হাইসাম (রা.) নবীজি (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের দাওয়াত করলেন। খাবার শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের বললেন, “তোমাদের ভাইকে প্রতিদান দাও।” সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, “কীভাবে তাঁকে সওয়াব দেব?” নবীজি (সা.) উত্তরে বললেন, “যখন কেউ তোমাদের খাবারের দাওয়াত দেয়, তখন তোমরা পানাহার শেষে তার জন্য দোয়া করবে। এটাই তার জন্য সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।”
নবীজির বিশেষ দোয়াসমূহ
১. সাদ বিন উবাদা (রা.)-এর ঘরে দাওয়াত গ্রহণের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া করেছিলেন:
“আকালা তা-আমাকুমুল আবরার, ওয়াসাল্লাত আলাইকুমুল মালায়িকা, ওয়া আফতারা ইনদাকুমুস সায়িমুন।”
অর্থ: “আল্লাহ তোমাদের খাবারে নেককারদের অংশ দান করুন, ফেরেশতারা যেন তোমাদের জন্য দোয়া করে এবং রোজাদাররা তোমাদের ঘরেই ইফতার করে।” (সুনানে আবু দাউদ)
২. আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) তাদের বাড়িতে খাবার গ্রহণ করে এই দোয়া করেছিলেন:
“আল্লাহুম্মা বারিক লাহুম ফি-মা রাজাকতাহুম, ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি তাদের রিজিকে বরকত দান করো, তাদের ক্ষমা করো এবং তাদের প্রতি রহম করো।” (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৬)
দাওয়াতের মাধ্যমে আমরা শুধু খাবারই ভাগ করি না, বরং পারস্পরিক ভালোবাসা ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ক দৃঢ় করি। এটি ইসলামের সুন্দর একটি আদর্শ, যা আমাদের সামাজিক ও আত্মিক জীবনে প্রসারিত হওয়া উচিত।