বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাব কোরবানির হাটে, পশু নিয়ে বিপাকে খামারি

টানা চার দিন ধরে বৃষ্টি ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে নেত্রকোণার কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি কমে গেছে। এতে গরু বিক্রি করতে না পেরে চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। অন্যদিকে, পশু বিক্রি কমে যাওয়ায় ইজারাদাররাও ক্ষতির মুখে। কোরবানির হাট তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
শুক্রবার ও শনিবার বিভিন্ন হাটের ইজারাদার ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদে মাত্র এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও বৃষ্টির কারণে হাটে পশু ও ক্রেতা—উভয়েরই সমাগম কম। অনেক খামারি আগেই গরু-ছাগল হাটে এনেও পর্যাপ্ত ক্রেতা পাচ্ছেন না। বৃষ্টির মধ্যে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের। কিছু হাটে বৃষ্টি থেকে রক্ষার কোনো ব্যবস্থাও নেই। খামারিরা নিজেদের উদ্যোগে শামিয়ানা টানালেও তা কাজে আসছে না, কারণ সারাদিনই বৃষ্টি চলছে।
দুর্গাপুরের শিবগঞ্জ গরুর হাটে শুক্রবার বিকালে তিনটি গরু নিয়ে আসেন আমির উদ্দিন। তিনি বলেন, “সকাল থেকে বৃষ্টি চলছে। একজন গরুর দাম জিজ্ঞেস করলেও দাম মেলেনি, তাই বিক্রি হয়নি। বৃষ্টির মধ্যে বসে আছি—গরু ভিজছে, আমিও ভিজছি। ছাতি নিয়ে বসে থাকলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। কাদায় ভরা বাজার, অসহ্য যন্ত্রণা!”
একই অবস্থা দুর্গাপুরের গাওকান্দিয়া গ্রামের খামারি মজিবুর মিয়ার। তিনি বলেন, “বাজারে কোনো ভালো ব্যবস্থাপনা নেই। বৃষ্টি ও কাদায় ভরা এই পরিবেশে ক্রেতা আসবে কীভাবে? শুধু কষ্ট আর দুর্ভোগ।”
শিবগঞ্জ বাজারের ইজারাদার মো. শাহ আলম বলেন, “বৃষ্টির কারণে পশু বিক্রি কমে গেছে। এভাবে চললে আমরা লোকসানের মুখে পড়ব।” বাজারে বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য ত্রিপল বা শামিয়ানার ব্যবস্থা কেন করা হয়নি—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রথমে নীরব থাকেন। পরে বলেন, “আমরাও ক্ষতির শিকার। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বিক্রি এক-চতুর্থাংশও হয়নি। বৃষ্টিই এর মূল কারণ।”
তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে গেলে হাটে জমজমাট পরিবেশ ফিরে আসবে।”
জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ১৬২টি পশুর হাট রয়েছে। এবার কোরবানির জন্য জেলায় এক লাখ ছয় হাজার গরু-ছাগলের চাহিদা রয়েছে। তবে খামারিরা এর চেয়ে বেশি—প্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, জেলায় চাহিদার তুলনায় ২৮ হাজার বেশি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এই অতিরিক্ত গরু-ছাগল দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে। তিনি আরও বলেন, “যেসব কৃষকের এক-দুইটি করে গরু-ছাগল বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে, সেগুলো আলাদাভাবে গণনা করা হয়নি। সেগুলোও বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে।”
কোরবানির পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলার হাটগুলোতে ৩৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। প্রতিটি টিমে তিনজন করে সদস্য রয়েছেন, যারা ইতিমধ্যে বাজারগুলোতে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন।
এদিকে, শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও আবহাওয়া仍然অনুকূল নয়। এমন অবস্থায় নেত্রকোণা পৌর শহরের রাজুর বাজারে খামারিরা গরু-ছাগল নিয়ে হাজির হয়েছেন। এই হাট থেকে স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি আশেপাশের এলাকার লোকজনও পশু কেনেন।
দুপুরের দিকে শহরের সাতপাই থেকে গরু কিনতে আসেন নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, “এতো বৃষ্টির মধ্যে গরু দেখা কঠিন। জামা-প্যান্ট ভিজে গেছে। কয়েকটি গরু দেখে তাড়াতাড়ি ফিরে যাচ্ছি, কেনার মতো পশু পাইনি।”
বিক্রেতাদের কষ্টের কথা শোনা গেল এখানেও।
বরওয়ারি এলাকা থেকে গরু নিয়ে সকালে হাটে এসেছিলেন মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, “সকাল থেকেই অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে, থামার কোনো লক্ষণ নেই। বৃষ্টিতে গরু এবং আমি—দুজনই ভিজছি। দুটি গরু নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু একটি পর্যন্ত বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতারা শুধু দরদাম করছেন। বৃষ্টির কারণে তারা ঠিকভাবে গরু নির্বাচনও করতে পারছেন না।”
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান জানান, “কোরবানির হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাজারে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জাল টাকা শনাক্ত করতে বিশেষ যন্ত্রসহ পুলিশ হাটগুলোতে অবস্থান করছে। সড়কগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, টহল দল সক্রিয় রয়েছে।”