হেঁটে কক্সবাজার থেকে এভারেস্টচূড়ায় উঠলেন শাকিল

কক্সবাজার থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন ইকরামুল হাসান শাকিল। নেপাল সময় ১৯ মে সকাল সাড়ে ছয়টায় তিনি শিখরে পৌঁছান। শাকিলের নেপালভিত্তিক ট্রাভেল এজেন্সি ‘এইটকেএক্সপেডিশনস’ প্রথম আলোকে এই খবর নিশ্চিত করেছে।

শাকিলের ফেসবুক পেজে বেলা ২টা ১০ মিনিটে তাঁর অভিযান সমন্বয়কারীরা জানান, “এইমাত্র খবর পেয়েছি, শাকিল সফলভাবে শৃঙ্গ জয় করেছেন এবং তিনি সুস্থ আছেন। এখন তিনি ক্যাম্প-৪-এ ফিরে এসেছেন। নেটওয়ার্ক সংযোগ না থাকায় বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

সমুদ্র থেকে শৃঙ্গে: ‘সি টু সামিট’ অভিযান

ইকরামুল হাসান শাকিল তাঁর এই অভিযানের নাম দিয়েছিলেন ‘সি টু সামিট’, অর্থাৎ সমুদ্র থেকে শৃঙ্গ পর্যন্ত। এই লক্ষ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানী বিচ থেকে তিনি পায়ে হেঁটে এভারেস্টের দিকে যাত্রা শুরু করেন। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে ১২ দিন পর ঢাকায় পৌঁছান। কিছুদিন বিশ্রামের পর আবার হাঁটতে শুরু করে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ হয়ে ২৮ মার্চ পঞ্চগড়ে পৌঁছান। এরপর ভারতের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং পেরিয়ে ৩১ মার্চ নেপালে প্রবেশ করেন। প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে ২৯ এপ্রিল তিনি এভারেস্ট বেসক্যাম্পে পৌঁছান।

এরপর ৬ মে প্রথম রোটেশনে ক্যাম্প-৩ পর্যন্ত উঠে আবার বেসক্যাম্পে ফিরে আসেন। ১৬ মে মূল অভিযান শুরু করে পর্যায়ক্রমে ক্যাম্প-২, ক্যাম্প-৩ ও ক্যাম্প-৪-এ পৌঁছান। শেষ পর্যন্ত ১৯ মে ভোররাতে ‘সামিট পুশ’ (চূড়ায় আরোহণ) করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

শিরোপার স্বাদে মিষ্টিমুখ মোহামেডানে

টিম ম্যাকার্টনির অনুপ্রেরণা

১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ প্রথমবারের মতো ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’ নামে সমুদ্রতীর থেকে হেঁটে এভারেস্ট জয়ের অভিযান শুরু করেছিলেন। ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে শুরু করে ৯৬ দিনে ১,২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি শৃঙ্গে পৌঁছান। টিমের এই কীর্তি শাকিলকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল, যার ফলস্বরূপ তিনি নিজেও একই নামে তাঁর অভিযান শুরু করেন।

অভিযানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান

‘সি টু সামিট’ অভিযানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল ‘প্রাণ’। এছাড়াও সহযোগিতা করেছে ইউএনডিপি, মিস্টার নুডলস, মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল ও সিস্টেমা টুথব্রাশ।

এভাবেই বাংলাদেশের এক তরুণ পর্বতারোহী কক্সবাজারের সৈকত থেকে পায়ে হেঁটে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পতাকা উড়িয়ে দেশের জন্য এক অনন্য ইতিহাস রচনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button