জলচর পাখি শুমারির গল্প

ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ টাঙ্গুয়ার হাওরে জলচর পাখি গণনা করতে গিয়েছিলাম। পরদিন সারাদিন ধরে হাওরের বিভিন্ন বিলে পাখি গণনা চলল। এবার হাওরে পানির পরিমাণ কম থাকায় পরিযায়ী হাঁসের দল এখানে জড়ো হয়েছিল খাদ্য ও বিশ্রামের সন্ধানে।
কিন্তু গণনা শেষে হতাশ হতে হলো। মাত্র ৩৪ প্রজাতির ২২,৫৪৭টি পাখি রেকর্ড করা গেল, যা ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই গণনার ইতিহাসে সর্বনিম্ন। সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে টাঙ্গুয়ায় ১.৫ লাখ পাখি দেখা যায়। এবারের সংখ্যা থেকে স্পষ্ট, হাওরের প্রাকৃতিক আবাস ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য করলাম, স্থানীয় হাঁস পালনের সংখ্যা বেড়ে গেছে, যা আগে বুনো হাঁসের আধিপত্য ছিল। স্থানীয়রা জানালেন, বিষটোপ ও অবৈধ শিকারের কারণে পাখিরা এখান থেকে চলে যাচ্ছে। আর গোচারণের ফলে জলজ উদ্ভিদও নিশ্চিহ্ন হয়েছে। তবে একটু আশার খবর হলো, এবার বিরল প্রজাতির ‘বৈকাল তিলিহাঁস’ দেখা গেছে। গত ১৪ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে টাঙ্গুয়ার ৫৯ প্রজাতির পাখি ক্রমাগত কমছে।
ফেব্রুয়ারির ২৩-২৪ তারিখ হাকালুকি হাওরেও পাখি গণনা করা হয়। ৪৫টি বিলে ৩৬,২৭৬টি পাখি রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে মহাবিপন্ন ‘বেয়ারার ভূতিহাঁস’ও রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে এ হাওরে নিয়মিত গণনা করছি। সাধারণত শীতকালে এখানে প্রায় ৫০ হাজার পাখি দেখা যায়। হাওরের লিজপ্রাপ্ত বিলগুলো যদি পাখির জন্য উপযোগী করা যায়, তাহলে তাদের সংখ্যা বাড়তে পারে।
উপকূলীয় ৪২টি চরে জানুয়ারির ৭ থেকে ১০ দিনব্যাপী পাখি গণনা হয়েছে, যা ১৯৮৭ সাল থেকে চলছে। ভোলা, নোয়াখালী ও বরিশালের প্রত্যন্ত চরে ৫৪ প্রজাতির ৩৮ হাজার পাখি দেখা গেছে, যার মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন ‘চামচঠুঁটো বাটান’ (মাত্র ২০০ জোড়া টিকে আছে) ও ১,৫০০ গাংচশার দল রয়েছে।
কুয়াকাটা থেকে সুন্দরবনের দুবলা পর্যন্ত নতুন রুটে জানুয়ারি ২২-২৭ তারিখ পর্যন্ত পাখি গণনা করা হয়। এবার ৭৫ প্রজাতির ৯,২০৬টি পাখি রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে অত্যন্ত বিরল ‘ইউরেশীয় ওয়েস্টার ক্যাচার’ মাত্র ২টি দেখা গেছে।
সোনাদিয়া দ্বীপে এবার ৫ হাজার সৈকত পাখি গণনা করা হয়েছে, যেখানে বিশ্বব্যাপী বিপন্ন ৭-৮টি প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এবারও ৩টি চামচঠুঁটো বাটান দেখা গেছে। সারাদেশে মোট গণনায় ১,২৯,৭৫২টি জলচর পাখি রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় কম। টাঙ্গুয়ায় পাখি কমে যাওয়ায় এই সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
আজ পরিযায়ী পাখি দিবস। মনে রাখা দরকার, পরিযায়ী পাখি আমাদেরই পাখি—এরা বছরের সাত মাস এখানে কাটায়। এবারের প্রতিপাদ্য “পাখিবান্ধব শহর ও সম্প্রদায় গঠন”। শহরগুলোতে জলাশয় সংরক্ষণ করলে পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় পাবে। এটি আমাদের সকলের দাবি।