ইরানকে পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র-হোয়াইট হাউজ

হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে, যার লক্ষ্য তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহাল করা।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি তেহরানে একটি স্বল্পস্থায়ী সফরে এসে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত চুক্তির কিছু অংশ তুলে ধরেছেন।

এই খবর আসে এমন সময়ে, যখন জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে যে ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন আরও বাড়িয়েছে। সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট শনিবার বলেন, ইরানের উচিত নিজেদের স্বার্থেই এই চুক্তি গ্রহণ করা। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইরান কখনোই পারমাণবিক বোমা পেতে পারবে না।”

হোয়াইট হাউজ এর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে এই “বিস্তারিত ও গ্রহণযোগ্য” প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান লেভিট।

অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক্স (টুইটার)-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের যথাযথ জবাব দেওয়া হবে, তবে তা ইরানের নীতিমালা, জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের অধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।”

ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আইএইএ-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের কাছে এখন ৬০% বিশুদ্ধতা সম্পন্ন ৪০০ কেজির বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য সাধারণত ৯০% বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হয়। তবে, ইরান এখন যে হারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, তা বেসামরিক পরমাণু প্রকল্পের চেয়ে অনেক বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের বর্তমান ইউরেনিয়াম মজুদ যদি আরও পরিশোধন করা হয়, তাহলে তা দিয়ে প্রায় ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।

আইএইএ-র প্রতিবেদন যদি সঠিক হয়, তাহলে ইরানই একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী নয় এমন দেশ, যা ৬০% বিশুদ্ধতা পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিকে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

তবে, ইরান দাবি করছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। হোয়াইট হাউজ দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া আইএইএ-র প্রতিবেদনকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” আখ্যা দিয়ে বলেছে, এতে “ভিত্তিহীন অভিযোগ” রয়েছে।

ইরান সতর্ক করে দিয়েছে যে, যদি আইএইএ-র গভর্নর বোর্ড তেহরানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তারা “প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা” নেবে।

এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা কীভাবে এগোবে, তা এখন সবার নজরে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button