যুবরাজ সালমানকেই কেন বেছে নিচ্ছেন ট্রাম্প

একবার চিন্তা করুন ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে বড় আশার আলো হয়ে উঠেছেন সেই ব্যক্তি, যিনি একসময় গাজা খালি করে সেখানে সমুদ্রসৈকত রিসোর্ট বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন। বর্তমান সংকট থেকে বেরোনোর সবচেয়ে সম্ভাব্য পথ এখন শুধুমাত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেই আসতে পারে। ইতিহাসের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন ও কোণঠাসা ইসরায়েলের প্রতি তিনি ক্রমশই ধৈর্য হারাচ্ছেন।
যদি ট্রাম্পের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হতেন, তাহলে গত সপ্তাহের তার মধ্যপ্রাচ্য সফরকে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু যেহেতু তিনি ট্রাম্প, তাই এটা স্থায়ী নাকি ক্ষণস্থায়ী তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তার ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অবস্থান সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে।
ঘটনার বিবরণ যদি শুধু গত সপ্তাহের সফর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখি, তাহলে বলতে হয় এটি মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন—বিশেষ করে সেই দেশটির প্রতি, যাকে যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে তার প্রধান মিত্র হিসেবে দেখেছে। কঠিন সত্য হলো, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এই সফরে ইসরায়েলেই যাননি।
এই বিষয়টি হয়তো উপেক্ষা করা যেত, কিন্তু ট্রাম্প সফরে যা বলেছেন ও করেছেন তা উপেক্ষার উপায় নেই। সৌদি আরবে তিনি শুধু ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে উষ্ণ অভ্যর্থনাই জানাননি, বরং তাকে বলেছেন, ‘আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি’—যিনি একসময় তার কঠোর সমালোচক ছিলেন। ট্রাম্প তাকে জিজ্ঞাসা甚至 করেছেন, দেশটিকে এত দ্রুত বদলে দেওয়ার পেছনে তার রাতের ঘুম কীভাবে হয়।
দুই নেতা ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছেন। গত সপ্তাহ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বই ছিল যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের মূল ভিত্তি। কিন্তু এখন সেই নিশ্চয়তা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, সৌদি আরব এখন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার’—এমন মর্যাদা যা এতদিন শুধু ইসরায়েলের ছিল।
আরও লক্ষণীয়, ট্রাম্প সৌদি আরবকে এই সমর্থন দিয়েছেন কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই। ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো শর্তই এতে যুক্ত ছিল না।
তার সফরের সর্বত্রই এই প্রবণতা দেখা গেছে। সিরিয়ায় তিনি আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ‘আকর্ষণীয়’ ও ‘যোদ্ধা’ বলে প্রশংসা করেছেন—যিনি ডিসেম্বর পর্যন্ত আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসী তালিকায় ছিলেন আল-কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে, যার মাথার দাম ছিল ১ কোটি ডলার।
এই অপ্রত্যাশিত মোড় নেওয়ায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে, ট্রাম্প একজন দরকষাকষিকারী হিসেবে কতটা দুর্বল—তিনি প্রায়শই বিনিময়ে কিছু না পেয়েই ছাড় দেন। শারাকে এত কিছু দেওয়ার পরও ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।
ট্রাম্প এখন শুধু সেই চুক্তিই করতে চান যা তিনি নিজে চান। তার সাবেক প্রধান মিত্ররা কী ভাবছে তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না। যেমন, তিনি ইয়েমেনের হুথিদের সাথে আলাদা চুক্তি করতে চান যাতে তারা লোহিত সাগরে আমেরিকান জাহাজে হামলা বন্ধ করে—কিন্তু এই চুক্তিতে ইসরায়েলে হুথি রকেট হামলা বন্ধের কোনো শর্ত নেই।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ইরানের সাথে নতুন পারমাণবিক চুক্তির ‘অত্যন্ত কাছাকাছি’ পৌঁছেছেন—যেখানে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বছরের পর বছর বলে আসছেন যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু বলপ্রয়োগেই থামানো যাবে। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, যিনি ইসরায়েল-বিরোধী এবং হামাসের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
ট্রাম্প যতটা জোরালোভাবে সম্ভব নেতানিয়াহুকে বার্তা দিচ্ছেন যে, তিনি আর তার ‘প্রিয় পাত্র’ নন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার নিজের স্বার্থে যা প্রয়োজন, তা করতে ট্রাম্প পিছপা হবেন না।